প্রথম টেষ্টে ব্যর্থতার পর জ্যামাইকা টেস্টে দারুনভাবে ঘুরে দাড়িয়েছে সফরকারী বাংলাদেশ। জ্যামাইকার কিংস্টনে ডান-হাতি পেসার নাহিদ রানার বিধ্বংসী বোলিংয়ে পর স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে লিড নিয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে সফরকারী বাংলাদেশ।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশে মাত্র ১৬৪ রানে অল-আউট হয়ে যাওয়ার পরেও ১৮ রানের লিড পেয়েছে বাংলাদেশ মুলত তরুন পেসার নাহিদ রানার বিধ্বংসী বোলিংয়ের কল্যানে। ৫ উইকেট নিয়ে ক্যারিবীয়দের ইনিংস একাই ধসিয়ে দেয় বাংলাদেশের এই মুহূর্তে সবচেয়ে গতিময় পেসার।
১৬৪ রানের জবাবে রানার বোলিং তোপে ১৪৬ রানে অলআউট হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৮ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে দিন শেষে ৫ উইকেটে ১৯৩ রান তুলেছে বাংলাদেশ। ফলে ৫ উইকেট হাতে নিয়ে ২১১ রানে এগিয়ে টাইগাররা।
এর আগে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ১ উইকেটে ৭০ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৯ উইকেট হাতে নিয়ে ৯৪ রানে পিছিয়ে ছিলো ক্যারিবীয়রা।
তৃতীয় দিনের শুরুতে জুটিতে পঞ্চাশ পূর্ণ করেন আগের দিন অপরাজিত থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ব্যাটার ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট ও কেসি কার্টি। গতিদানব রানা দিনের ষষ্ঠ ওভারে ব্র্যাথওয়েট-কার্টির প্রতিরোধ ভাঙেন। গালিতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরেন ৩টি চারে ৩৯ রান করা ব্র্যাথওয়েট। জুটিতে ৬০ রান যোগ করেছিলেন ব্র্যাথওয়েট ও কার্টি। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে স্বাগতিকরা।
অধিনায়কের বিদায়ে ক্রিজে আসা নতুন ব্যাটার কাভেম হজকে বেশিক্ষন টিকতে দেননি রানা। ৩ রানে উইকেটের পেছনে লিটন দাসকে ক্যাচ দেন হজ।
রানার জোড়া আঘাতের পর উইকেট শিকারে নাম লেখান পেসার তাসকিন আহমেদ। ২ রান করা অ্যালিক আথানাজেকে দারুণ ডেলিভারিতে বোল্ড করেন তাসকিন।
রানা-তাসকিনের তোপের মাঝে উইকেট শিকারে মাতেন স্পিনার তাইজুল ইসলাম। প্রথম টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান জাস্টিন গ্রেভসের উইকেট উপড়ে ফেলেন তাইজুল। ২ রান করেন গ্রেভস।
১০৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জোড়া উইকেট নিয়ে ক্যারিবীয়দের খাদের কিনারায় ফেলেন পেসার হাসান মাহমুদ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেটরক্ষক জশুয়া ডা সিলভাকে ৫ ও কার্টিকে ৪০ রানে শিকার করেন হাসান।
১১৭ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৭ উইকেট তুলে নিয়ে লিডের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে বাংলাদেশ। সেই স্বপ্ন পূরণের কাজটা সাড়েন রানা ও মিরাজ। শামার জোসেফকে ৬ রানে মিরাজ এবং আলজারি জোসেফকে ৭ ও কেমার রোচকে ৮ রানে আউট করেন রানা। এতে ১৪৬ রানেই গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৬১ রানে শেষ ৯ উইকেট হারায় ক্যারিবীয়রা। উপরের সারির প্রথম তিন ব্যাটার ছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের আর কোন ব্যাটারই দুই অংকে পা রাখতে পারেনি।
রোচকে শিকার করে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ম্যাচে এসে প্রথমবারের মত ইনিংসে পাঁচ উইকেটের দেখা পান গত মার্চে সিলেটে শ্রীলংকার বিপক্ষে অভিষেক হওয়া রানা। গতির সাথে নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ইনিংসে ১৮ ওভার বল করে ৬১ রানে ৫ উইকেট নেন তিনি। গত আগস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে অল্পের জন্য ইনিংসে ৫ উইকেট পূর্ণ করতে পারেননি ২২ বছর বয়সী রানা। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৪ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।
বাংলাদেশের তৃতীয় পেসার হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্টের ইনিংসে ৫ উইকেট নিলেন রানা। এর আগে খালেদ আহমেদ ও তাসকিন আহমেদ ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন। তিনজনই ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে এমন কীর্তি গড়েন।
১৮ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে প্রথম ওভারেই ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়কে হারায় বাংলাদেশ।
তবে ওয়ানডে মেজাজে রান তোলার চেষ্টা করেন তিন নম্বরে নামা শাহাদাত হোসেন। ৪টি চারে ২৬ বলে ২৮ রান করে জোসেফের শিকার হন শাহাদাত। আরেক ওপেনার সাদমান ইসলামের সাথে জুটিতে ৫৮ বলে ৪৭ রান যোগ করেন শাহাদাত।
তবে ক্রিজে এসেই টি-টোয়েন্টি মেজাজে ব্যাট চালান অধিনায়ক মিরাজ। শামারের করা ইনিংসের ১২তম ওভারের দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম বলে টানা চারটি বাউন্ডারি মারেন মিরাজ। তার সাথে বাউন্ডারিতে মেতে উঠেন সাদমানও। মিরাজ ক্রিজে আসার পর ৬টি চার মারেন তিনি।
এতে ২৯ বলে জুটিতে হাফ-সেঞ্চুরি পেয়ে যান সাদমান ও মিরাজ।
কিন্তু তাদের ঝড়ো হাফ-সেঞ্চুরির জুটিতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান শামার। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন সাদমান। প্রথম ইনিংসে হাফ-সেঞ্চুরি পেলেও এবার ৪ রানের জন্য মিস করেছেন তিনি। ৭টি চারে ৮২ বলে ৪৬ রান করেন সাদমান। মিরাজের সাথে জুটিতে ৭৪ বলে ৭০ রান যোগ করেন সাদমান।
সতীর্থকে হারানোর পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি মিরাজ। শামারের দ্বিতীয় শিকার হন মিরাজ। রিভিউ নিয়ে মিরাজকে সাজঘরে পাঠিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৭টি বাউন্ডারিতে ৩৯ বলে ৪২ রান করেন মিরাজ।
চতুর্থ ব্যাটার হিসেবে মিরাজের আউটের পর বাংলাদেশের রানের চাকা সচল রাখেন লিটন দাস ও জাকের আলি। ৫২ বলে ৪১ রানের জুটির পর বিচ্ছিন্ন তারা। একবার জীবন পেয়ে ৩টি চারে ২৫ রানে আউট হন লিটন।
দলীয় ১৭৩ রানে লিটন ফেরার পর তাইজুলকে নিয়ে ২০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দিন শেষ করেছেন জাকের। তাইজুল ৯ ও জাকের ৩টি চারে ২৯ রানে অপরাজিত আছেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ৭১.৫ ওভারে ১৬৪/১০ (সাদমান ৬৪, মিরাজ ৩৬, সিলেস ৪/৫)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস : ৬৫ ওভারে ১৪৬/১০ (কার্টি ৪০, ব্র্র্যাথওয়েট ৩৯, রানা ৫/৬১)।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস : ৪১.৪ ওভারে ১৯৩/৫ (সাদমান ৪৬, মিরাজ ৪২, শামার ২/৭০)।