খেলোয়াড়ী জীবনে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে বাংলাদেশে জন্য অসংখ্য পুরস্কার-সম্মাননা নিয়ে আসা সাবেক জাতীয় ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন এনায়েত উল্লাহ খান এখন একজন সফল ব্যাডমিন্টন প্রশিক্ষক।
প্যারা (প্রতিবন্ধী) ব্যাডমিন্টন নিয়ে একাই দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন সাবেক জাতীয় ব্যাডমিন্টন তারকা। গতকাল (রোববার) রাজধানী পল্টনে অবস্থিত শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ ইনডোর স্টেডিয়ামের ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনে এনায়েত উল্লাহ খানকে দেখা গেলো প্যারা ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়দের নিয়ে ব্যাস্ত সময় কাটাচ্ছেন কারন সামনেই (জানুয়ারীতে) মিশরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে প্যারা ব্যাডমিন্টন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট সেখানে বাংলাদেশও অংশগ্রহন করবে। ব্যাস্ততার মাঝেও প্যারা ব্যাডমিন্টনের প্রধান কোচ এবং প্যারা ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ খান কথা বলেছেন ট্রেন্ডিং নিউজ টুয়েন্টিফোরের সাথে।ট্রেন্ডিং নিউজ টুয়েন্টিফোরের সাথে আলাপকালে তিনি জানিয়েছেন প্যারা ব্যাডমিন্টনের বর্তমান অবস্থা, প্যারা ব্যাডমিন্টন নিয়ে তার ভবিষ্যত লক্ষ্যের কথা এবং আরও অনেক কিছু।
"প্যারা ব্যাডমিন্টন দলটা বেশ ভালো অবস্থায় আছে বিশেষ করে শেষ কয়েকটি টুর্নামেন্টে আমাদের খেলোয়াড়রা দারুন কিছু সাফল্য এনে দিয়েছে। ২০২৩ সালে আমরা তিনটি আন্তর্জাতিক পদক অর্জন করেছি। এবারও আমরা জাপানে গিয়েছিলাম সেখানে আমাদের প্লেয়ার ইমাম পঞ্চম হয়েছে। জয়তু ধর হয়েছে ষষ্ঠ। মিক্সড ডাবলসেও আলী ইমাম পঞ্চম হয়েছে। সবমিলিয়ে তাদের সাফল্যে আমি আশাবাদী।"
এনায়েত উল্লাহ খানের হাত ধরে ২০২৩ সালে বাংলাদেশ প্যারা ব্যাডমিন্টন ইতিহাস রচনা করেছে। সেবার জাপান প্যারা ইন্টারন্যাশনাল ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট-২০২৩ থেকে দুটি ব্রোঞ্জ জিতেছিলো বাংলাদেশের দুই প্যারা শাটলার (প্রতিবন্ধী) মোহাম্মদ আলী ইমাম এবং জয়তু ধর। এছাড়াও একই বছর সেপ্টেম্বরে ইন্দোনেশিয়ার সোলোতে অনুষ্ঠিত ফক্সেস ইন্দোনেশিয়া প্যারা ব্যাডমিন্টন ইন্টারন্যাশনাল টুর্নামেন্ট থেকে একটি ব্রোঞ্জ পদক জিতে নেয় বাংলাদেশ। ডাবলসে কুয়েতের শাটলার আব্দুল্লাহর সঙ্গে জুটি বেঁধে বাংলাদেশকে এই পদক এনে দেন এনায়েত উল্লাহর শিষ্য মো. ইয়ামিন। এসএইচ-৬ ক্যাটাগরির প্যারা শাটলার ইয়ামিন টুর্নামেন্টের এককেও অংশ নিয়েছিলেন। তবে কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে যান তিনি। এনায়েত উল্লাহ আক্ষেপের সুরে বলেন ভালো
পৃষ্ঠপোষকতা পেলে প্যারা ব্যাডমিন্টনে আরাও বড় সাফল্য আনা সম্ভব হতো।
"আসলে তেমন বড় কোন পৃষ্ঠপোষক পাচ্ছিনা প্যারা ব্যাডমিন্টন। কেউ এগিয়ে আসছেনা। আমি নিজের উদ্যোগেই কাজ করে যাচ্ছি। আমি শতভাগ চেষ্টা করছি খেলোয়াড়দের কিভাবে আরও এক্সপোজ করা যায়। খেলোয়াড়রা যেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরোও ভালো খেলতে পারে সে চেষ্টাই করছি। খেলোয়াড়দের মান উন্নয়নের জন্য আমি এককভাবে কাজ করে যাচ্ছি। তাদের আসা যাওয়া থেকে শুরু করে যতটুকু সাহায্য করা সম্ভব আমি করে যাচ্ছি। কিন্তু এটা যথেষ্ট না। বড় কোন
পৃষ্ঠপোষক যদি এগিয়ে আসতো বিশেষ করে বসুন্ধরা গ্রুপ কিংবা গ্রামীন ব্যাংকের মত বড় কর্পোরেট কম্পানিগুলো যদি এগিয়ে আসতো তাহলে আমি আমার খেলোয়াড়দের আরও ভালো পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারতাম।"
বাংলাদেশে এই মুহূর্তে মোট ৬ ক্যাটাগরিতে মোট ১৪০ জন প্যারা খেলোয়াড় রয়েছেন। তাদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ন্যাশনাল প্যারা অলিম্পিক বাংলাদেশ (এনপিসি)। এই এনপিসির একজন সদস্য এনায়েত উল্লাহ খান।
সেই ২০১৮ সাল থেকে শুরু। শুরুতে এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এনায়েত এখন প্যারা ব্যাডমিন্টনের সাধারণ সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত। জাতীয় পর্যায়ে তো কাজ করছেনই নিয়মিত;অংশ নিচ্ছেন আন্তর্জাতিক আসরেও। ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো প্যারা ব্যাডমিন্টনে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন করে আলোচনার ঝড় তোলেন এনায়েত। এরপর করোনা পরবর্তী সময়ে খেলোয়াড় এবং কোচেস কোর্স আয়োজন করেন। ২০২১ সালে দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হয় প্যারা ব্যাডমিন্টন জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ।
"প্যারা স্পোর্টসে অনেকগুলো ডিসিপ্লিন আছে যেমন টেবিল টেনিস, আরচারী, শুটিং, তায়কোয়ান্দো, সুইমিং। আমি মনে করি প্যারা ব্যাডমিন্টনের সাফল্যের ধারের কাছেও নেই দেশের অন্যান্য প্যারা ডিসিপ্লিন। জাপানে দুটি ব্রোঞ্জ জয় আমি মনে করি আমাদের অনেক বড় সাফল্য। যেখানে বাংলাদেশে অংশগ্রহনই বড় ব্যাপার ছিলো সেখানে আমরা পদক ছিনিয়ে এনেছি। এটা অনেক বড় ঘটনা।"
খেলোয়াড়ী জীবনে দেশের জন্য অনেক সাফল্য বয়ে এনেছেন এনায়েত। দেশের একমাত্র জাতীয় চ্যাম্পিয়ন পুরুষ লেভেল-২ সার্টিফাইড কোচ তিনি। বিশ্বের ১৯ দেশে ৪৭ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা দেশের একমাত্র শাটলার। এর বাইরেও জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে অনেক সাফল্য বয়ে এনেছেন।
ক্যারিয়ার শুরু ১৯৯৬ সাল থেকে। জাতীয় ও র্যাংকিং টুর্নামেন্ট মিলিয়ে মোট ৪ বার চ্যাম্পিয়ন ও ৫ বার রানারআপ হয়েছেন এনায়েত। এছাড়া জাতীয় পর্যায়ে মিশ্র দ্বৈতে ২ বার হয়েছেন রানার্সআপ। প্রথম বিভাগ লীগে ক্লাব পর্যায়ে (বাংলাদেশ বিমানের হয়ে) দলগতভাবে তিন বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ পেয়েছেন মুন্সীগঞ্জে জন্ম নেয়া এনায়েত। ২০০১ সালে ঢাকায় ওয়ার্ল্ড এয়ারলাইন্স চ্যাম্পিয়নশিপে দলগতে শিরোপা এনে দিয়েছেন দেশকে। পরের বছর ঢাকায় এশিয়ান স্যাটেলাইট চ্যাম্পিয়নশিপে দলগতে রানার্সআপ হয়েছিলেন। এনায়েতের ক্যারিয়ারে সেরা সময় ছিল ২০০৮ সাল। সিঙ্গাপুরে ওয়ার্ল্ড এয়ারলাইন্স চ্যাম্পিয়নশিপের দলগতে চ্যাম্পিয়ন ও ব্যক্তিগত এককে রানারআপ ট্রফি জেতেন সেবার। আর ২০১০ সালে ঢাকায় ১১তম সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসে দলগত বিভাগে ব্রোঞ্জজয়ী দলে ছিলেন তিনি। জীবনের একমাত্র জাতীয় ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপের তার শিরোপা এসেছিল পাবনাতে, ২০১১ সালে। সাইফ উদ্দিনকে হারিয়ে হয়েছিলেন চ্যাম্পিয়ন সেবার। সেই পাবনাতেই ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচে হেরে শাটলার জীবনের ইতি টানেন। মূলত কোচ হতেই অবসর নিয়ে ফেলেন।
প্যারা ব্যাডমিন্টনের পাশাপাশি বাংলাদেশ জাতীয় ব্যাডমিন্টন দলের কোচও ছিলেন এনায়েত। তবে সময়ের অভাবে এখন শুধু প্যারা ব্যাডমিন্টনের সাথেই আছেন। তবে সামনে ব্যাস্ততা কমে গেলে আবারও জাতীয় ব্যাডমিন্টন দলের হয়েও কাজ করতে ইচ্ছুক এনায়েত।দেশকে এনে দিতে চান আরও অনেক সাফল্য।