রোদের তাপ যেন কমছেই না। চারিদিকে বাতাসে ভ্যাপসা গরম। ফলে তৃষ্ণা যেনো মেটেই না। আবহাওয়ার যখন এমন হাল তখন চাই প্রচুর পরিমাণে পানীয় পান করা। পানীয়টা যদি হয় কচি ডাব, তবে তো কথাই নেই। তৃষ্ণাও নিবারণ হবে, পুষ্টিও মিলবে। ডাবের পানি খাওয়ার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে শুধু গরমকাল নয়, সারা বছর যদি নিয়ম করে ডাবের পানি খাওয়া যায়, তাহলে একাধিক রোগ শরীরের ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না। শুধু তাই নয়, ডাবের পানি উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যামাইনো অ্যাসিড, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন সি, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, মেঙ্গানিজ এবং জিঙ্ক নানাভাবে শরীরে গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এসব উপাদানই আমাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন পরে।
ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটবে
ডাবের পানি হলো প্রকৃতিক টোনার, যা ত্বককে সংক্রমণ থেকে বাঁচানোর পাশাপাশি সার্বিকভাবে স্কিনের ঔজ্জ্বলতা বাড়াতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে ব্রণের প্রকোপ কমাতেও এই প্রাকৃতিক উপাদানটি সাহায্য করে থাকে।
ওজন কমবে
ডাবের পানি উপস্থিত বেশ কিছু উপকারি এনজাইম হজম ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি মেটাবলিজমের উন্নতিতেও সাহায্য করে থাকে। ফলে খাবার খাওয়া মাত্র তা এত ভালো ভাবে হজম হয়ে যায় যে শরীরের অন্দরে হজম না হওয়া খাবার মেদ হিসেবে জমার সুযোগই পায় না। ফলে ওজন কমতে শুরু করে। ডাবের পানি শরীরে লবণের মাত্রা ঠিক রাখে। ফলে ওয়াটার রিটেনশন বেড়ে গিয়ে ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কাও হ্রাস পায়।
ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকবে
ডাবের পানি উপস্থিত ভিটামিন সি, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে থাকে। সম্প্রতি ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান মেডিকেল জানার্লে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে পটাশিয়াম শরীরে লবণের ভারসাম্য ঠিক রাখার মধ্যে দিয়ে ব্লাড প্রেসারকে স্বাভাবিক রাখে। তাই যাদের পরিবারে এই মারণ রোগটির ইতিহাস রয়েছে, তাদের নিয়মিত ডাবের পানি খাওয়া উচিত। একই নিয়ম যদি রক্তচাপে ভোগা রোগীরাও মেনে চলেন, তাহলেও দারুণ উপকার মেলে।
ব্লাড সুগারকে বেঁধে রাখবে
২০১২ সালে হওয়া জার্নাল ফুড অ্যান্ড ফাংশন স্টাডিসে দেখা গিয়েছিল ডাবের পানিতে থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিড এবং ডায়াটারি ফাইবার ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হবে
রাইবোফ্লবিন, নিয়াসিন, থিয়ামিন এবং পাইরিডোক্সিনের মতো উপকারি উপদানে ভরপুর ডাবের পানি প্রতিদিন পান করলে শরীরের অন্দরের শক্তি এতটা বৃদ্ধি পায় যে জীবাণুরা কোনওভাবেই ক্ষতি করার সুযোগ পায় না। সেই সঙ্গে ডাবের পানিতে উপস্থিত অ্যান্টি-ভাইরাল এবং অ্যান্টি-বয়াকটেরিয়াল প্রপাটিজ নানাবিধ সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
শরীরে পানির ঘাটতি দূর হবে
ডাবের পানি শরীরের অন্দরে প্রবেশ করা মাত্র পানির ঘাটতি মিটতে শুরু করে। সেই সঙ্গে এতে উপস্থিত ইলেকট্রোলাইট ক¤েপাজিশান ডায়ারিয়া, বমি এবং অতিরিক্ত ঘামের পর শরীরে ভিতরে খনিজের ঘাটতি মেটাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই কারণেই তো গরমকালে ডাবকে রোজের সঙ্গী করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।
হার্টের টনিক
শরীরে বাজে কোলেস্টেরল বা এল ডি এল-এর পরিমাণ কমিয়ে হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে ডাবের পানির কোনো বিকল্প হয় না বললেই চলে। শুধু তাই নয়, দেহে ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা কমাতেও ডাবের পানি বিশেষ ভূমিকা নিয়ে থাকে।
মাথা যন্ত্রণা দূরে থাকবে
ডিহাইড্রেশনের কারণে মাথা যন্ত্রণা বা মাইগ্রেনর অ্যাটাক হওয়ার মতো ঘটনা ঘটলে দ্রুত এক গ্লাস ডাবের পানি খেয়ে নেবেন। এমনটা করলে দেখবেন নিমেষে কষ্ট কমে যাবে। আসলে এই প্রকৃতিক উপাদানটিতে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম, এই ধরনের শারীরিক সমস্যার চিকিৎসায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
শরীরের বয়স কমবে
খাতায় কলমে বয়স বাড়লেও শরীরের বয়স কি ধরে রাখতে চান? তাহলে আজ থেকেই ডাবের পানি খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার পাবেন। আসলে ডাবের পানি রয়েছে সাইটোকিনিস নামে নামে একটি অ্যান্টি-এজিং উপাদান, যা শরীরের উপর বয়সের ছাপ পরতে দেয় না। সেই সঙ্গে ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
কিডনি ফাংশনের উন্নতি ঘটবে
প্রচুর মাত্রায় পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকার কারণে ডাবের পানি কিডনির কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে শরীরে উপস্থিত টক্সিন উপাদানদের ইউরিনের সঙ্গে বের করে দিয়ে নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমায়।
স্ট্রেস কমবে
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে ডাবের পানি উপস্থিত ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম শরীরের অন্দের প্রবেশ করার পর একদিকে যেমন স্ট্রেস কমায়, তেমনি পেশীর সচলতা বৃদ্ধিতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এখানেই শেষ নয়, ডাবের পানিতে থাকা ক্যালসিয়াম দাঁত এবং হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।