‘অবশেষে জেনেছি মানুষ একা!
জেনেছি মানুষ তার চিবুকের কাছেও ভীষণ অচেনা ও একা!’
অথবা,
'ঝিনুক নীরবে সহো/
ঝিনুক নীরবে সহো,
ঝিনুক নীরবে সহে যাও/
ভিতরে বিষের বালি, মুখ বুঁজে মুক্তা ফলাও!'
এমন অসংখ্য জনপ্রিয় কবিতার জনক ছিলেন কবি আবুল হাসান। ষাটের দশকের অবিসংবাদিত এই কবি অল্প সময়েই পেয়েছিলেন গ্রহণযোগ্যতা। কিন্তু অকালেই মৃত্যুর কাছে হেরে যান আবুল হাসান। বাংলা সাহিত্যের এই ক্ষণজন্মা কবির আদ্যোপান্ত নিয়েই সাজানো হয়েছে কীর্তিমান বিভাগের আজকের প্রতিবেদন-
আবুল হাসান পেশায় সাংবাদিক ছিলেন। তার প্রকৃত নাম আবুল হোসেন মিয়া আর সাহিত্যিক নাম আবুল হাসান। তিনি ষাটের দশকের জনপ্রিয় কবিদের একজন এবং সত্তরের দশকেও গীতল কবিতার জন্য জনপ্রিয়তা লাভ করেন।
১৯৪৭ সালের ৪ আগস্ট তৎকালীন ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমা বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়ার বর্নি গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকার আরমানিটোলা সরকারি বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৩ সালে এস.এস.সি পাশ করেন। তারপর বরিশালের বিএম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন।
পরবর্তীকালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে বি.এ শ্রেণিতে ভর্তি হন কিন্তু পরীক্ষা শেষ না করেই ১৯৬৯ সালে দৈনিক ইত্তেফাকের বার্তাবিভাগে যোগদান করেন। তিনি গণবাংলাএবং দৈনিক জনপদে সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
আবুল হাসান অল্প বয়সেই একজন সৃজনশীল কবি হিসেবে খ্যাতিলাভ করেন। মাত্র এক দশকের কাব্যসাধনায় তিনি আধুনিক বাংলার ইতিহাসে এক বিশিষ্ট স্থান অধিকার করেন। আত্মত্যাগ, দুঃখবোধ, মৃত্যুচেতনা, বিচ্ছিন্নতাবোধ, নিঃসঙ্গচেতনা, স্মৃতিমুগ্ধতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আবুল হাসানের কবিতায় সার্থকভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। ১৯৭০ সালে এশীয় কবিতা প্রতিযোগিতায় তিনি প্রথম হন।
তার উল্লেখযোগ্য কবিতা: তোমার চিবুক ছোঁব, কালিমা ছোঁব না, বয়ঃসন্ধি, উচ্চারণগুলি শোকের, পাখি হয়ে যায় প্রাণ, ভালোবাসার কবিতা লিখবো না, চামেলী হাতে নিম্নমানের মানুষ, জন্ম মৃত্যু জীবনযাপন, অসভ্য দর্শন, মিসট্রেসঃ ফ্রি স্কুল স্ট্রীট, নিঃসঙ্গতা, উদিত দুঃখের দেশ, বিচ্ছেদ, তোমার মৃত্যুর জন্য, জ্যোস্নায় তুমি কথা বলছো না কেন ইত্যাদি।
অন্যান্য রচনাবলি-
কবিতাপুস্তক: রাজা যায় রাজা আসে, যে তুমি হরণ করো, পৃথক পালঙ্ক।
গল্প: আবুল হাসান গল্প-সংগ্রহ।
কাব্যনাট্য: ওরা কয়েকজন।
সংকলন: আবুল হাসান রচনা সমগ্র।
কবি আবুল হাসান ১৯৭৫ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও ১৯৮২ সালে মরণোত্তর একুশে পদক লাভ করেন।
১৯৭৫ সালের ২৬ নভেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।