‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় /এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’
এমনই আগুন জ্বলানো কবিতা দিয়ে তরুণদের উদ্দীপ্ত করেছিলেন কবি হেলাল হাফিজ। অথবা ‘কষ্ট নেবে কষ্ট/হরেক রকমের কষ্ট'সহ তরুণদের অনেক প্রিয় কবিতা তারই লেখা।
মিছিলের সেই আলোকিত কবি, হরেক রকম কষ্টের সেই ফেরিওয়ালা কবি হেলাল হাফিজ আর আমাদের মাঝে নেই।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) লাখো মানুষকে কাঁদিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন অনন্ত লোকের দিকে। তার মৃত্যুতে সাহিত্য অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
চলুন, এক নজরে জেনে নিই কবি হেলাল হাফিজ সম্পর্কে
কবি হেলাল হাফিজ ১৯৪৮ সালের ৭-ই অক্টোবর নেত্রকোনা জেলার বড়তলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নেত্রকোনা দত্ত হাইস্কুল থেকে ১৯৬৫ সালে মেট্রিক এবং ১৯৬৭ সালে নেত্রকোনা কলেজ থেকে আই.এ পাশ করেন। ওই বছরেই কবি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় ১৯৭২ সালে তিনি তৎকালীন জাতীয় সংবাদপত্র "দৈনিক পূর্বদেশে" সাংবাদিকতায় যোগদান করেন। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন "দৈনিক পূর্বদেশের" সাহিত্য সম্পাদক। ১৯৭৬ সালের শেষ দিকে তিনি "দৈনিক দেশ" পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক পদে যোগদান করেন। সর্বশেষ তিনি দৈনিক যুগান্তরে কর্মরত ছিলেন।
১৯৮৬ সালে বহুল আলোচিত তাঁর বিখ্যাত কবিতার বই ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ প্রকাশিত হয়। কবি এ পর্যন্ত বেশ কিছু পুরুষ্কারে ভূষিত হয়েছেন, বিশেষ করে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থের জন্যে তিনি পেয়েছেন নারায়ণগঞ্জ বৈশাখী মেলা উদযাপন কমিটির কবি সংবর্ধনা (১৯৮৫), যশোর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার (১৯৮৬), আবুল মনসুর আহমদ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৭), নেত্রকোনা সাহিত্য পরিষদের কবি খালেকদাদ চৌধুরী পুরস্কার ও সম্মাননা প্রভৃতি।
"যে জলে আগুন জ্বলে"--এ কাব্যগ্রন্থে হেলেন নামে এক নারীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়, যিনি ছিলেন কবির প্রেমিকা। তার সাথে বিচ্ছেদের পরে কবি প্রায় ২৫ বছর এক ধরণের স্বেচ্ছা-নির্বাসনে জীবন যাপন করেন। অতঃপর নির্বাসিত জীবন থেকে বেরিয়ে তিনি বর্তমানে ঢাকা জাতীয় প্রেস ক্লাবের নিকটে বসবাস শুরু করেন।
২৬ বছর পর ২০১২ সালে আসে তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘কবিতা একাত্তর’। অবশেষে, ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হন।