• বৃহস্পতিবার ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪
logo

নারী অধিকার আন্দোলনের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া

সুদীপ্ত সাইদ খান ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১১:০৭ এএম

তৎকালীন মুসলিম সমাজব্যবস্থা অনুসারে রোকেয়া ও তাঁর বোনদের বাইরে পড়াশোনা করতে পাঠানো হয়নি, তাদের ঘরে আরবি ও উর্দু শেখানো হয়।

বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। এই নামটি উচ্চারণের পর তাকে নিয়ে আর কিছু বলার প্রয়োজন পড়ে না। সবাই জানেন এই মহীয়সী নারী সম্পর্কে। আজকের দিনেই প্রয়াত হয়েছিলেন তিনি। অবাক করার মতো ব্যাপার হলো- ওনার জন্মও একই তারিখে, ৯ই ডিসেম্বর। অর্থাৎ একই দিনে জন্মবার্ষিকী ও মৃত্যুবার্ষিকী।

বেগম রোকেয়া ছিলেন সাহিত্যিক, শিক্ষাব্রতী, সমাজসংস্কারক এবং নারী জাগরণ ও নারীর অধিকার আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ। 

১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার অন্তর্গত পায়রাবন্দ ইউনিয়নে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম জমিদার পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা জহীরুদ্দীন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের এবং মাতা রাহাতুন্নেসা সাবেরা চৌধুরানী। 

তৎকালীন মুসলিম সমাজব্যবস্থা অনুসারে রোকেয়া ও তাঁর বোনদের বাইরে পড়াশোনা করতে পাঠানো হয়নি, তাদের ঘরে আরবি ও উর্দু শেখানো হয়। তবে রোকেয়ার বড় ভাই ইব্রাহীম সাবের আধুনিক মনস্ক ছিলেন। তিনি রোকেয়াকে ঘরেই গোপনে বাংলা ও ইংরেজি শেখান। 

১৮৯৬ সালে ১৬ বছর বয়সে রোকেয়ার বিয়ে হয় ভাগলপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে। বিয়ের পরে তার নাম হয় রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। বেগম রোকেয়ার স্বামী মুক্তমনা মানুষ ছিলেন, রোকেয়াকে তিনি লেখালেখিতে উৎসাহ দেন। 

১৯০২-এ ‘পিপাসা’ নামে একটি বাংলা গল্পের মধ্যদিয়ে তিনি সাহিত্যজগতে পা রাখেন। ১৯০৯ সালের ৩ মে সাখাওয়াত হোসেন মারা যান। তাঁদের দুটি কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করে অকালেই মারা যায়। স্বামীর মৃত্যুর পর নিঃসঙ্গ রোকেয়া নারীশিক্ষা বিস্তার ও সমাজসেবায় আত্মনিয়োগ করেন।

১৯০৯ সালের ১ অক্টোবর স্বামীর প্রদত্ত অর্থে পাঁচটি ছাত্রী নিয়ে তিনি ভাগলপুরে ‘সাখাওয়াৎ মেমোরিয়াল গার্লস’ স্কুল স্থাপন করেন; কিন্তু পারিবারিক কারণে রোকেয়া ভাগলপুর ছেড়ে কলকাতায় এসে বসবাস শুরু করেন। ১৯১১ সালের ১৬ মার্চ কলকাতার ১৩ নম্বর ওয়ালীউল্লাহ লেনের একটি বাড়িতে মাত্র আটজন ছাত্রী নিয়ে তিনি নবপর্যায়ে ‘সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করেন।

রোকেয়ার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ১৯১৭ সালে এই স্কুল মধ্য ইংরেজি গার্লস স্কুলে এবং ১৯৩১ সালে উচ্চ ইংরেজি গার্লস স্কুলে রূপান্তরিত হয়।

সাহিত্যিক হিসেবে তৎকালীন যুগের প্রেক্ষাপটে রোকেয়া ছিলেন এক ব্যতিক্রমী প্রতিভা। নবনূর, সওগাত, মোহাম্মদী, নবপ্রভা, মহিলা, ভারতমহিলা, আল-এসলাম, নওরোজ, মাহে নও, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা, দি মুসলমান (The Mussalman), ইন্ডিয়ান লেডিস ম্যাগাজিন (Indian Ladies Magazine) প্রভৃতি পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লিখতেন।

রোকেয়ার উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে রয়েছে ‘মতিচূর’ (প্রবন্ধ), Sultana’s Dream (নকশাধর্মী রচনা), ‘পদ্মরাগ’ (উপন্যাস), ‘অবরোধবাসিনী’ (নকশাধর্মী গদ্যগ্রন্থ) প্রভৃতি।

এছাড়া আছে অসংখ্য প্রবন্ধ, ছোটগল্প, কবিতা, ব্যঙ্গাত্মক রচনা ও অনুবাদ।

নারী জাগরণের অগ্রদূত এবং আলোর দিশারি বেগম রোকেয়ার জীবনকাল ছিল মাত্র ৫২ বছরের। ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর কলকাতায় তার মৃত্যু হয়।