স্বাধীনতার মাস ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের আজকের দিনে স্বাধীনতার জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিন।
মোহাম্মদ রুহুল আমিন ১৯৩৫ সালের জুন মাসের কোনো এক বর্ষণমুখর রাতে নোয়াখালীর বাঘচাপড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মোহাম্মদ আজহার পাটোয়ারি ছিলেন মোটামুটি সচ্ছল গৃহস্থ এবং মা জোলেখা খাতুন ছিলেন গৃহিণী। ছোটবেলায় তার পড়াশোনা শুরু হয় পাড়ার মক্তবে ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে, পরে বাঘচাপড়া প্রাইমারি স্কুলে। স্কুল পাস করে ভর্তি হন আমিষাপাড়া হাই স্কুলে। হাই স্কুল পাস করে ১৯৫৩ সালে তিনি নৌবাহিনীতে জুনিয়ার মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং এপ্রিল মাসে ত্রিপুরা সীমান্ত অতিক্রম করে ২ নং সেক্টরে যোগদান করেন। সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত তিনি বহু সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন।
সেপ্টেম্বর ১৯৭১-এ বাংলাদেশ নৌবাহিনী গঠনের উদ্দেশ্যে সব সেক্টর থেকে প্রাক্তন নৌ সেনাদের আগরতলায় সংগঠিত করে নৌবাহিনীর প্রাথমিক কাঠামো গঠন করা হয়। পরে তাদের কলকাতায় আনা হয়। সেখানে অন্যদের সঙ্গে রুহুল আমিনও ছিলেন। ভারত সরকার বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে দুটি টাগবোট উপহার দেয়। এগুলোকে কলকাতার গার্ডেনরিচ নৌ ওয়ার্কশপে দুটি বাফার গান ও মাইন পড লাগিয়ে গানবোটে রূপান্তরিত করা হয়। গানবোট দুটির নামকরণ করা হয় ‘পদ্মা’ ও ‘পলাশ’।
রুহুল আমিন নিয়োগ পান পলাশের ইঞ্জিন রুম আর্টিফিশার হিসেবে।
১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর মোংলা বন্দরে পাকিস্তানি নৌঘাঁটি পিএনএস তিতুমীর দখলের উদ্দেশ্যে ‘পদ্মা’, ‘পলাশ’ ও মিত্র বাহিনীর গানবোট ‘পানভেল’ ভারতের হলদিয়া নৌঘাঁটি থেকে রওনা হয়। ১০ ডিসেম্বর সকাল ৭টায় কোনো বাধা ছাড়াই তারা মোংলা দখল করেন।
এরপর টার্গেট করেন খুলনা দখলের। জাহাজ তিনটি খুলনার কাছাকাছি চলে যায়। এমন সময় একটি বোমারু বিমান দুটি জাহাজের ওপরই বোমা ফেলে। এতে রুহুল আমিনের ডান হাতটি উড়ে যায়। আহত অবস্থায় তিনি নদীতে ঝাঁপ দিয়ে নদী সাঁতরে পারে ওঠেন; কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। রাজাকারদের হাতে নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করেন রুহুল আমিন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তাকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।