শীতে শুষ্ক আবহাওয়া ও ধুলাবালুতে ত্বক হয়ে যায় খসখসে আর মলিন। শীতের শুষ্ক বাতাসে আর্দ্রতা হারিয়ে এই রুক্ষতা আরো বেশি দেখা যায়। নিয়মিত যত্ন না নিলে ত্বক খসখসে হয়ে পড়ে। এই সময়ে ছেলেদের ত্বকেরও আলাদা যত্নের প্রয়োজন হয়।
ইদানীং ছেলেদের ত্বকের জন্য তাদের উপযোগী নানা প্রসাধনী পণ্য যেমন ক্রিম, লোশন, ময়েশ্চারাইজার বাজারে পাওয়া যায়। এগুলো জেনেবুঝে তবেই ব্যবহার করা উচিত।
বেশি গরম পানিতে গোসল নয়
শীতের সময় সারাদিন বাইরে ঘোরাঘুরি শেষে রাতে বাসায় ফিরে গরম পানিতে গোসল অনেকের অভ্যাস। কিন্তু বারবার বেশি গরম পানিতে গোসল হিতে বিপরীত হতে পারে। অল্প সময় নিয়ে কুসুম গরম পানিতে গোসল করতে হবে। বেশিক্ষণ গরম পানিতে গোসলে ত্বক আরো বেশি শুষ্ক হয়ে পড়ে। তাছাড়া প্রতিদিন গরম পানিতে গোসল করা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর।
নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার
শীতকালে ময়েশ্চারাইজিং সাবান ব্যবহার করতে হবে। এতে ত্বকে খসখসে ভাব কমে আসবে। গোসলের পর ত্বকে ময়েশ্চারাইজিং লোশন ব্যবহার করতে হবে। রাতে ঘুমানোর আগে ও গোসলের পর নিয়মিত ময়েশ্চারাইজিং লোশন ব্যবহার করলে ত্বকের খসখসে ভাব দূর হবে। ফলে আর চুলকানি হবে না, ত্বকও ফাটবে না। ঘর থেকে বাইরে যাওয়ার সময় লোশন মেখে বের হতে হবে। এতে ত্বকে সূর্যের তাপ লাগবে না। ত্বক বাইরের ধুলাবালু থেকেও রক্ষা পাবে।
শীতেও সানস্ক্রিন
অনেকের ধারণা, শীতে সানস্ক্রিনের দরকার নেই। আদতে এটি ঠিক নয়। শীতেও বাইরে গেলে সানস্ক্রিন লাগানো জরুরি। শীত, মেঘ বা বৃষ্টি যা-ই হোক না কেন সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি যাঁদের রোদে বেশি থাকা হয়, তাঁরা সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারেন। ভালো মানের এসপিএফ ৩০ বা ঊর্ধ্বের সানস্ক্রিন বেছে নিন। প্রতি ছয় ঘণ্টা পর পর ত্বকে পুনরায় সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। শীতের সময় বাইরে বের হওয়ার আগে মুখ পরিষ্কার করে সান ব্লক লাগাতে হবে।
নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার
শীতে বাতাসে ধুলাবালির পরিমাণ বাড়ে। তৈলাক্ত ত্বকে ধুলাবালি বেশি আটকে লোমকূপ বন্ধ করে দেয়। এতে ব্রণ ওঠা বৃদ্ধি পায়। এ জন্য অয়েল কন্ট্রোল ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে হবে। ক্রিম, লোশন বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করার আগে ভালোভাবে মুখ পরিষ্কার করে নিতে হবে। তা না হলে ক্রিম ঠিকমতো কাজ করবে না। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে বেশি ময়েশ্চারাইজারযুক্ত নাইট ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। এতে ত্বক ঠাণ্ডা থাকবে। ব্রণ উঠবে না। এ ছাড়া সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিলে ত্বক পরিষ্কার থাকবে।
ত্বকের যত্নে স্ক্রাবার
মুখে সপ্তাহে দুই বা তিন দিন আর পুরো শরীরে সপ্তাহে একদিন স্ক্রাবার ব্যবহার করুন। আলু ও দুধ একসঙ্গে ব্লেন্ড করে প্যাক তৈরি করতে পারেন। সুজি, দুধের সর এবং মধু মিশিয়ে স্ক্রাব বানিয়েও ব্যবহার করতে পারেন। এই স্ক্রাবার মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর মুখ ধুয়ে নিন। সপ্তাহে একবার স্ক্রাবার ব্যবহার করতে পারেন। ত্বকের মৃতকোষ দূর হবে। ত্বকের গভীর থেকে ময়লা পরিষ্কার হবে।
ঠোঁটের যত্নে চ্যাপস্টিক বা লিপজেল
এছাড়া শীতের এই সময়ে পকেটে সব সময় একটা চ্যাপস্টিক রাখতে পারেন। ঠোঁট শুকিয়ে এলে এক পরত লাগিয়ে নিলে ঠোঁট আর ফাটবে না। এ ছাড়া স্বাস্থ্যকর খাবার ও জীবনাভ্যাস এই সময় ত্বক সুন্দর ও উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করবে।
ত্বক সজীব রাখতে মালটা ও কমলার রস
শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় ছেলেদের ত্বককে স্বাভাবিক ও সজীব রাখতে হলে মালটা ও কমলার রস মুখে মাখা যেতে পারে। এরপর কিছুক্ষণ রেখে ১০-১৫ মিনিট ম্যাসাজ করতে হবে। কিছুদিন নিয়মিত এটি করলে ত্বকের সজীবতা ফিরে আসবে। আর ক্রিম ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভিটামিন ই-জাতীয় ক্রিম ব্যবহার করতে হবে।
এছাড়া গোসলের পর ও রাতে ঘুমানোর আগে কুসুম-কুসুম গরম পানির ভাপ নিলে ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে এবং ত্বক ভালো থাকবে। এছাড়া ফেসিয়াল করালে ত্বক সজীব থাকবে। অনেক সময় হাতে বা কনুইয়ে খসখসে ভাব হয়। এটি দূর করতে পানি আর গ্লিসারিন একসঙ্গে মিশিয়ে হাতে বা খসখসে স্থানে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে নিয়মিত যত্ন না করলে শীতে ত্বক সতেজ রাখা সম্ভব নয়। তাই প্রতিদিনই একটু সময় করে ত্বকের যত্ন নিতে হবে।