নিয়মিত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত চোটের কারণে দলে না থাকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে অধিনায়ক মিরাজ। সুযোগটা যেন ভালোভাবেই কাজে লাগালেন এই অলরাউন্ডার। কেননা তার নেতৃত্বেই ১৫ বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টেস্ট জিতল বাংলাদেশ।
১০১ রানের এই দারুণ জয়ে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক কৃতিত্ব দিচ্ছেন দলের সবাইকেই।
মিরাজ বলেন, ‘জয়ের কৃতিত্ব দিতে চাই সব খেলোয়াড়কে। আমি যেভাবে পরামর্শ দিয়েছি, সবাই মেনে নিয়েছে। কন্ডিশনটা সহজ ছিল না। সব খেলোয়াড়ের জন্যই অনেক কঠিন ছিল। সবাই মানসিকভাবে এমন ছিল যে ম্যাচটা জিততে হবে। সবাই চেয়েছিল মন থেকে ম্যাচটা জেতার জন্য। এর জন্যই আমরা ম্যাচটা জিততে পেরেছি।’
ক্যারিবিয়ান সফর বরাবরই বাংলাদেশের জন্য ভীষণ কঠিন। এবারও ২০১ রানে হেরে শুরু হয় বাংলাদেশ ও মিরাজের মিশন।
দ্বিতীয় টেস্টেও টস জিতে আগে ব্যাটিং নিয়ে ১৬৪ রানে গুটিয়ে যান মিরাজরা। তবে এরপরই ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প শুরু। এবং সেই গল্প শেষ হলো বাংলাদেশের জয়ের মাধ্যমে। কঠিন এই কন্ডিশনে বুক চিতিয়ে লড়াই করে চতুর্থ দিন বিকেলে শেষ পর্যন্ত বিদেশের মাটিতে অনেকদিন পর টেষ্ট জয় ছিনিয়ে আনে বাংলাদেশ।
তবে স্যাবাইনা পার্কে মঙ্গলবার টেস্টের চতুর্থ দিনে মিরাজের অধিনায়কত্ব ছিলো চোখে পড়ার মত। বোলারদের তিনি যেভাবে ব্যবহার করেছেন, যেভাবে আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চাপে রেখেছিলেন এবং সবাইকে যেভাবে উদ্দীপ্ত করেছেন, ম্যাচ জয়ের পর তিনি প্রশংসার দাবী করতেই পারেন।
‘আলহামদুলিল্লাহ, খুবই ভালো লাগছে, প্রথম ম্যাচ হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচ জিতেছি, এটা অবশ্যই আমার জন্য বড় একটা অর্জন। যেহেতু আমি প্রথম অধিনায়কত্ব করছি, এটা আমার জন্য বড় একটা পাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে।’
‘আমি খেলোয়াড়দের একটা কথা বলেছি, এই উইকেটে ইতিবাচক চিন্তা ছাড়া খেললে অনেক কঠিন হবে। যেহেতু আমরা প্রথম ইনিংসে ১৮ রানের লিড পেয়েছি, এখানে রান করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা জানি যে এই উইকেটে যদি আমরা ২৫০ রান করতে পারি, আমাদের জন্য ম্যাচটা জেতা সহজ হবে। বার্তাটা এ রকমই ছিল যে খেলোয়াড়েরা ইতিবাচক খেলবে।’
এদিকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন মুমিনুল হক। যার কারণে ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন আনে টাইগাররা। পরিবর্তিত পজিশন তিনে খেলে শাহাদাত হোসেন দিপু করেন ২৬ বলে ২৮ রান।
চারে নেমে মিরাজ করেন ৩৯ বলে ৪২ রান। আর ছয়ে নেমে জাকের আলী আটটি চার ও পাঁচটি ছক্কায় করেন ১০৬ বলে ৯১ রান। মূলত মিরাজের ইতিবাচক চিন্তাভাবনাই বাংলাদেশকে শেষ পর্যন্ত এগিয়ে রেখেছে।
মিরাজ আরও বলেন, ‘সৌরভ ভাই (মুমিনুল) অসুস্থ হওয়ার পর দলের সবাই বিমূঢ় হয়ে পড়েছিল। ওই জায়গায় (পজিশন) ব্যাটিং করাটা একটু কঠিন। কিন্তু দীপুকে (শাহাদাত) আমি বলেছিলাম, ও রাজি হয়েছে। ওকে আমি একটা কথা বলেছিলাম, এই উইকেটে তুমি ইতিবাচক খেলো। যদি মনে করো, প্রথম বলটাই মারার মতো, তুমি প্রথম বলেই মারো। তোমাকে কেউ কিছু বলবে না। আমি তোমাকে অভয় দিলাম। ও সেভাবেই খেলেছে। ওর ২৮টা রান খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’
‘আমিও চারে একই মানসিকতা নিয়ে খেলেছি। কারণ, এই উইকেটে রানটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। খেলোয়াড়দের প্রতি বার্তাটাই এটা ছিল, একটা রানও খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রতিটি খেলোয়াড় যেন রানের জন্য ক্রিকেট খেলে। এর মানে এই না যে টেস্ট ক্রিকেট, ঠেকাব—আমরা এই পরিকল্পনায় খেলেছি।’