আনোয়ার হোসেন। বাংলাদেশের আধুনিক আলোকচিত্রশিল্পের পুরোধা ব্যক্তিত্ব। আলোকচিত্রে বাংলাদেশকে তিনিই প্রথম আন্তর্জাতিকভাবে পরিচয় করিয়ে দেন। তার কল্যাণেই সত্তরের দশক থেকে পৃথিবীব্যাপী বাংলাদেশের আলোকচিত্র সমাদৃত। স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন সর্বাধিক সংখ্যক আন্তর্জাতিক পুরস্কার, খেতাব ও সম্মাননা। শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক হিসেবে পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া সিনেমাটোগ্রাফার আনোয়ার হোসেন ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর মারা যান। প্রয়াণ দিবসে এই কিংবদন্তিকে নানাভাবে স্মরণ করছেন অনুসারিরা।
চলুন, এক নজরে জেনে নিই এই কিংবদন্তির আদ্যোপান্ত
ছাত্র জীবনেই আলোকচিত্রী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন আনোয়ার হোসেন। স্বচ্ছ্বল পরিবারে জন্ম না হলেও শুধু ইচ্ছের জোড়ে তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি ফটোগ্রাফিতে মনোনিবেশ করেন। ১৯৬৮ সালে পাকিস্তানের শ্রেষ্ঠ ফটোগ্রাফার হিসেবে পুরস্কার অর্জন করেছিলেন। একই বছরে জাপানে অনুষ্ঠিত আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ আলোকচিত্রশিল্পীর স্বর্ণপদক অর্জন করেন তিনি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ক্যামেরা কাঁধে যোগদান করেছিলেন আনোয়ার হোসেন। তার তোলা বেশকিছু আলোকচিত্র আজও পাকিস্তানিদের নির্মমতার সাক্ষ্য বহন করে চলে।
ফটোগ্রাফার হিসেবে খ্যাতি থাকলেও ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’র মধ্য দিয়ে সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবেও নিজের মেধার পরিচয় দেন আনোয়ার হোসেন। শেখ নেয়ামত আলী ও মসিহউদ্দিন শাকেরের যৌথ পরিচালনায় এই ছবিটি তৎকালীন সময়ে চলচ্চিত্র অঙ্গনে বেশ সাড়া ফেলে। এই ছবির জন্যই আনোয়ার হোসেন প্রথমবার শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
বাংলাদেশে এ যাবৎ যে চলচ্চিত্রগুলো স্মরণীয় হয়ে আছে তার সিংহভাগ ছিলো আনোয়ার হোসেনের চিত্রগ্রহন। এরমধ্যে ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’, ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’, ‘পুরস্কার’, ‘অন্য জীবন’, ‘দহন’, ‘হুলিয়া’, ‘চাকা’, ‘চিত্রানদীর পাড়ে’, ‘লালসালু’, ‘লালন’ এবং ‘শ্যামল ছায়া’ অন্যতম।
নীলিমা ইব্রাহিমের মেয়ে ডলি ইব্রাহিমকে বিয়ে করেছিলেন আনোয়ার হোসেন। ১৯৯১ সালে ডলির মৃত্যুর পর নব্বই দশকের মাঝামাঝিতে দেশ ছেড়ে ফ্রান্সে পাড়ি জমিয়ে ছিলেন তিনি। সেখানে মিরিয়ামকে বিয়ে করে সেখানকার নাগরিকত্বও গ্রহণ করেছিলেন। তবে মাঝেমধ্যেই চলচ্চিত্র বিষয়ক বিভিন্ন ওয়ার্কশপ ও সেমিনারে অংশ নিতে দেশে চলে আসতেন আনোয়ার হোসেন। ২০১৮ সালে মৃত্যুর ঠিক ক’দিন আগেই একটি ফটোগ্রাফির ওয়ার্কশপের জুরি হিসেবে দেশে আসেন আনোয়ার। রাজধানীর একটি হোটেল কক্ষে মৃত্যু হয় তার। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর।