• বৃহস্পতিবার ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪
logo

বুদ্ধদেব বসু: স্বতন্ত্র ধারার কাণ্ডারি

টিএন২৪ ডেস্ক ০২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১১:২৭ এএম

বাংলা কবিতায় স্বতন্ত্র ধারা সৃষ্টির যে প্রয়াস তিরিশের কবিদের মধ্যে দেখা যায়, বুদ্ধদেব বসু সেই ধারার অন্যতম কাণ্ডারি।

বুদ্ধদেব বসু। বিশ শতকের বাঙালি কবি, প্রাবন্ধিক ও উপন্যাসিক। তিনি সাহিত্য সমালোচক হিসেবে অধিক গ্রহণযোগ্য।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবদ্দশায় তাঁর প্রভাবের বাইরে এসে যারা লেখালেখি করেছেন; তিনি তাদের মধ্যে অন্যতম। ইংরেজি ভাষায় কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ রচনা করে তিনি ইংল্যান্ড ও আমেরিকায় প্রশংসা অর্জন করেছিলেন। বাংলা সাহিত্য সমালোচনার দিকপাল, কবিতা পত্রিকার প্রকাশ ও সম্পাদনার জন্য তিনি বিশেষভাবে সমাদৃত। এ ছাড়াও তিনি একজন বাঙালি কবি, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, গল্পকার, অনুবাদকও ছিলেন।

ফলে বাংলা কবি ও কবিতার আলোচনায় বুদ্ধদেব বসুর নাম অবধারিত। বাংলা কবিতায় স্বতন্ত্র ধারা সৃষ্টির যে প্রয়াস তিরিশের কবিদের মধ্যে দেখা যায়, বুদ্ধদেব বসু সেই ধারার অন্যতম কাণ্ডারি। আধুনিক বাংলা কবিতা বিশ্লেষণের অন্যতম নায়কও বুদ্ধদেব বসু। সমালোচনাও যে সাহিত্য হয়ে উঠতে পারে, বুদ্ধদেব বসু তা যুক্তিনিষ্ঠভাবে উপস্থাপন করেছেন। তার প্রবন্ধ পড়ার সময় পাঠক একটি বোধ পাবেন। সেই বোধ পাঠককে বাস্তবঘনিষ্ঠ করে তুলবে। তবে তার রচনার সংহতি পরিমিতি এবং বস্তুনিষ্ঠতা প্রবল। চিন্তা ও আবেগের ক্রিয়াকলাপ অন্য সমালোচকের লেখায় অনুভব করা যায় না।

আধুনিক কবিদের অনেকেই জনপ্রিয়তার আড়ালেই থেকে যেতেন। যদি না বুদ্ধদেব বসু একা তাদের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে না নিতেন। বিশেষ করে জীবনানন্দকে প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলস চেষ্টা করে গেছেন তিনি। বুদ্ধদেব বসু বারবার সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেন, নতুন এই কবিকে। তেমনই আরও অনেক কবিকে তিনি তুলে ধরেছেন তার লেখায়। সেসবের সমষ্টিই তার বিখ্যাত প্রবন্ধগ্রন্থ ‘কালের পুতুল’।

কালের পুতুল ১৯৪৬ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। এতে প্রমথ চৌধুরী, দীনেশরঞ্জন দাশ, জীবনানন্দ দাশ, সমর সেন, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বিষ্ণু দে, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, অমিয় চক্রবর্তী, নিশিকান্ত, অন্নদাশঙ্কর রায়, ফাল্গুনী রায়, সুকুমার সরকার, নজরুল ইসলাম, যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত প্রমুখের সাহিত্যকর্ম নিয়ে আলোচনা স্থান পেয়েছে। এতে বুদ্ধদেব বসুর লেখা বিভিন্ন সময়ের ২৫টি প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে।

চলুন জেনে নেওয়া যাক, বুদ্ধদেব বসুর আদ্যোপান্ত-

কথাসাহিত্যিক, কবি ও প্রাবন্ধিক বুদ্ধদেব বসুর জন্ম ৩০ নভেম্বর ১৯০৮ সালে কুমিল্লায়। পিতা ভূদেব বসু,  মাতা বিনয় কুমারী। পৈতৃক আদি নিবাস বিক্রমপুরের মালখানগরে। শিক্ষাজীবন ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল, ঢাকা কলেজ,  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

অধ্যাপনার মাধ্যমেই তাঁর কর্মজীবন শুরু। এ ছাড়া তিনি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেন। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ-

কবিতা : বন্দীর বন্দনা, পৃথিবীর পথে,  দ্রৌপদীর শাড়ি, শীতের প্রার্থনা : বসন্তের উত্তর, স্বাগত বিদায়। 

উপন্যাস : সাড়া, সানন্দা, কালো হাওয়া, তিথিডোর, নির্জন স্বাক্ষর, নীলাঞ্জনের খাতা, রাত ভ’রে বৃষ্টি, বিপন্ন বিস্ময়।

গল্প : অভিনয়, অভিনয় নয়, রেখাচিত্র, হাওয়া বদল, ভাসো আমার ভেলা, প্রেমপত্র। 

প্রবন্ধ : হঠাৎ আলোর ঝলকানি, কালের পুতুল, সাহিত্যচর্চা, রবীন্দ্রনাথ : কথাসাহিত্য, স্বদেশ ও সংস্কৃতি। 

নাটক : মায়া-মালঞ্চ, তপস্বী ও তরঙ্গিণী, কলকাতার ইলেকট্রা ও সত্যসন্ধ। 

অনুবাদ : কালিদাসের মেঘদূত, বোদলেয়ার : তাঁর কবিতা, রাইনের মারিয়া রিলকের কবিতা।

স্মৃতিকথা : আমার ছেলেবেলা, আমার যৌবন। 

সম্পাদনা : আধুনিক বাংলা কবিতা। সম্মাননা পান পদ্মভূষণ, সাহিত্য আকাদেমি ও রবীন্দ্র-পুরস্কার (মরণোত্তর)। 

তিনি ১৮ মার্চ ১৯৭৪ সালে কলকাতায় মারা যান।