• শুক্রবার ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪
logo

জেনে নিন ইসলামে পবিত্রতা অর্জনের গুরুত্ব!

টিএন২৪ প্রতিবেদক ২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১১:৫৫ এএম

ইসলামে পবিত্রতা অর্জনের গুরুত্ব অপরিসীম। মহান আল্লাহ-যিনি সর্বোত্তম পবিত্র। তাই তিনি পবিত্রতাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। পবিত্রতা অর্জন ছাড়া আল্লাহর ইবাদাত করা সম্ভব নয়।

ইসলামে পবিত্রতা অর্জনের গুরুত্ব অপরিসীম। মহান আল্লাহ-যিনি সর্বোত্তম পবিত্র। তাই তিনি পবিত্রতাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। পবিত্রতা অর্জন ছাড়া আল্লাহর ইবাদাত করা সম্ভব নয়। বিশেষ করে, ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান শারীরিক ইবাদাত নামাজ, আর্থিক ও শারীরিক ইবাদাত হজ এবং ওমরাহ সম্পন্ন করতে ‍ওযু অথবা গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করতে হবে। এমনকি হাদিসের ভাষায় শ্রেষ্ঠ ইবাদাত ‘পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত’ও সম্ভব নয় পবিত্রতা ব্যতিত। 

সংক্ষেপে পবিত্রতা অর্জনের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে-আরবি ভাষায় ত্বাহারাত অর্থ পবিত্রতা। শরীরের বিশেষ অঙ্গসমূহকে কুরআন ও হাদিসের নির্দেশিত পদ্ধতিতে ধৌত করার মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করতে হয়। অর্থাৎ শরীর থেকে নাপাকি দূর করাকে ত্বাহারাত বা পবিত্রতা বলা হয়।

পবিত্রতা অর্জনের প্রধান দুটি পন্থা হলো অজু ও গোসল। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং তিনি আকাশ থেকে তোমাদের ওপর বারি বর্ষণ করেন তা দ্বারা তোমাদের পবিত্র করার জন্য।’ (সুরা-৮ আনফাল, আয়াত: ১১)। ‘এবং আমি আকাশ থেকে বিশুদ্ধ পানি বর্ষণ করি।’ (সুরা-২৫ ফুরকান, আয়াত: ৪৮)। এ ছাড়াও পৃথিবীতে যথেষ্ট পরিমান পানি দেয়া হয়েছে। যার মাধ্যমে আমাদেরকে পবিত্রতা অর্জন করতে হবে।

তবে অজুর ৪টি ফরজ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনেরা! যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হবে, তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে এবং তোমাদের মাথা মাসাহ করবে এবং পা টাকনু পর্যন্ত ধৌত করবে; যদি তোমরা অপবিত্র থাকো, তবে বিশেষভাবে পবিত্র হবে। 

এ ছাড়া তোমরা যদি পীড়িত হও...অথবা পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করবে।’ (সুরা-৫ মায়িদাহ, আয়াত: ৬)। অজু ও গোসলের প্রয়োজনে পানি ব্যবহারে অপারগতায় পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম সম্পন্ন করা হয় (কুদুরি)।  এ সকল অবস্থায় গোসল ব্যতিত নামাজ এমনকি মুখস্ত কুরআন তিলাওয়াত করা এবং কুরআন স্পর্শ করাকে বিজ্ঞ আলেমগণ নিষেধ করেছেন। 

তবে ইবাদাত-বন্দেগির জন্য শুধু নিজের শরীর পবিত্রতা অর্জন করলেই হবে না বরং পরিধেয় বস্ত্র এবং পোষাকও যথা সম্ভব পবিত্র করতে হবে। আল কুরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা পোষাক-পরিচ্ছদ পবিত্র রাখ। (সুরা মাদদাসসির : আয়াত ৪)

অপরদিকে, পেশাব-পায়খানার পর নামাজের জন্য নির্দিষ্ট অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হতে ময়লা দূর করাসহ অজু ভঙ্গের যে কারণগুলো রয়েছে, তা থেকে পবিত্রতা অর্জন করাও আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা নামাজ পড়ার ইচ্ছা করো, তখন তোমাদের সম্পূর্ণ মুখমণ্ডল ধৌত করো, উভয়হাত কনুইসহ ধৌত করা; মাথা মাসেহ করা; উভয় পা টাখনুসহ ধৌত করা।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৬)

রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যারা ঘুম থেকে ওঠবে, তারা ৩ বার হাত ধৌত না করা পর্যন্ত পানির পাত্রে হাত প্রবেশ করাবে না। মহানবী (সা.) পবিত্রতাকে ঈমানের অর্ধেক বলেছেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে- ‘পবিত্রতা ঈমানের অর্ধাংশ।’ (মুসলিম, মিশকাত)

অপরদিকে, পবিত্রতা নবী–রাসুলদের বিশেষ গুণ বা বৈশিষ্ট্য। পবিত্র কুরআনে তাঁদের পরিচয় বিবৃত হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই তারা এমন লোক, যারা অতি পবিত্র হতে চায়।’ (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ৮২; সুরা-২৭ নমল, আয়াত: ৫৬)। এছাড়া অজুর ফজিলত সম্পর্কে হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ভালোভাবে অজু করল, অতঃপর কালিমা শাহাদত পড়ল; তার জন্য জান্নাতের ৮টি দরজাই খোলা থাকবে, সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করবে।’ (মুসলিম: ২৩৪, আবুদাউদ: ১৬৯, নাসায়ি: ১৪৮, তিরমিজি: ৫৫, ইবনে মাজাহ: ৪৭০, মুসনাদে আহমাদ: ১২২)।

এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনের অন্য অংশে, আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীকে ভালোবাসেন এবং পবিত্রতা অর্জনকারীকে ভালোবাসেন। (সুরা বাক্বারা : আয়াত ২২২)। অতএব, মুসলিম উম্মাহকে তাঁর প্রিয় হওয়ার জন্য সর্বদা পবিত্র থাকার চেষ্টা করতে হবে। একজন মুসলিম হিসেবে এ বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক।