নীল জলে ঘুরে বেড়াচ্ছে দৈত্যাকার হাউজ বোট। গঠন ও আকার দেখে প্রথমে মনে হতে পারে ভারতের কেরালার আলেপ্পি হ্রদ ঘুরছে যানটি। আদতে এই বোট রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদেই পর্যটক নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। একদল তরুণ উদ্যোক্তার হাত ধরে যাত্রা শুরু করেছে এই বোট সার্ভিস। এতে চড়ে হ্রদ ও পাহাড়ের রূপ উপভোগ করেন প্রকৃতিপ্রেমীরা।
রাঙামাটিতে উদ্বোধন হলো দেশের সবচেয়ে বড় দ্বিতলবিশিষ্ট কাঠের হাউজ বোট রয়েল এডভেঞ্চার গত শনিবার চট্টগ্রাম বিভাগের রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই লেকে উদ্বোধন হলো রয়েল অ্যাডভেঞ্চার নামের একটি দ্বিতলবিশিষ্ট হাউজ বোট। এটি এখনও পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বড় কাঠের তৈরি হাউজ বোট।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য রাঙামাটি জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা। আরও উপস্থিত ছিলেন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য এবং রাঙ্গামাটি জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. মুছা মাতব্বর, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি সেলিনা আখতার, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো. শাওয়াল উদ্দিন, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ চাকমা প্রমুখ।
উদ্বোধন শেষে অতিথিদের নিয়ে কাপ্তাই হ্রদ ভ্রমণ করে প্রমোদতরীটি। এসময় প্রমোদতরীটির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন মো. মহিউদ্দিন মজুমদার আনন্দ, মো. মিজানুর রহমান, ফারুক আহমেদ, মো. বখতিয়ার, ইমন বড়ুয়া প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বৃষকেতু চাকমা বলেন, রাঙ্গামাটি একটি পর্যটন নগরী। এখানে হ্রদ, পাহাড়, ঝর্ণা একসঙ্গে উপভোগ করা যায়। হ্রদের বুকে এই ধরনের সুন্দর সুবিধা সম্বলিত একটি হাউস বোট পর্যটকদের দারুণভাবে আকর্ষণ করবে বলে আমার বিশ্বাস। পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয়দের জন্য লেকে বেড়ানোর এক দারুণ মাধ্যম তৈরি হলো।
বিশেষ অতিথি হাজী মো. মুছা মাতব্বর বলেন, আমরা সাধারণত ভিয়েতনাম, চায়না, থাইল্যান্ড এসব দেশে এই ধরনের প্রমোদতরী দেখতে পাই। কিন্তু রাঙ্গামাটিতেও এই ধরনের হাউস বোট চালু হওয়ায় আমি মনে করি আমরাও ধীরে ধীরে স্মার্ট যুগে প্রবেশ করছি। এই হাউস বোটগুলো পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষণ হিসেবে কাজ করবে এবং পাশাপাশি রাঙ্গামাটির পর্যটন বিকাশে ভূমিকা রাখবে।
রয়েল অ্যাডভেঞ্চারের সিইও মো. মহিউদ্দিন মজুমদার বলেন, পর্যটন খাতে কাজ করার মানসিকতা থেকেই আমরা এই হাউস বোটটি তৈরি করেছি। এটি রাঙ্গামাটির সবচেয়ে বড় হাউস বোট। আমাদের এখানে আটটি রুম রয়েছে। যার মধ্যে বারান্দাসহ দুটি সুপার প্রিমিয়াম রুম আছে। প্রতিটি রুমের সঙ্গে ওয়াশরুম আছে। প্রতি রুমে চার জন করে থাকা যাবে। আমাদের বোটেই নিজস্ব রেস্টুরেন্ট আছে। আমরা স্থানীয় এবং ট্র্যাডিশনাল খাবারগুলো সার্ভ করার চেষ্টা করি। যাতে পর্যটকরা স্থানীয় খাবার সম্পর্কে একটা ধারণা লাভ করতে পারেন।
দ্য রয়েল অ্যাডভেঞ্চার হাউজ বোটের পরিচালক মো. ফারুক বলেন, আমরা চেষ্টা করছি, পর্যটকদের জন্য স্থানীয় খাবার রাখার জন্য। তবে কোনও পর্যটক চাইলে তার চাহিদামত সব ব্যবস্থা করা যাবে। কারণ রান্নাঘর আমাদের বোটে রয়েছে।
কক্সবাজার থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক লাবণী সেন বলেন, বোটটা আসলেই খুব সুন্দর করেছে। বিশেষ করে ছাদে কৃত্রিম ঘাসের কার্পেটে বসে বাইরের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। তাছাড়া রুমের ভেতর থেকেও বাইরের ভিউটা খুব সুন্দর। মালদ্বীপের হাউস বোটগুলোর মতোই মনে হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা শেফালিকা চাকমা বলেন, রাঙ্গামাটি যেহেতু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ তাই এখানে ন্যাচারাল ভাইভটা থাকা খুব প্রয়োজন, যা এই বোটটিতে আছে। রাঙ্গামাটির অন্যান্য হাউস বোটগুলোতে সব সুযোগ-সুবিধা থাকলেও অনেক বোটে প্রকৃতি উপভোগের সুযোগটা নেই। সেক্ষেত্রে পর্যটক আকর্ষণে অন্যান্য বোটগুলো থেকে রয়েল অ্যাডভেঞ্চার এগিয়ে থাকবে বলে আমি মনে করি।
রাঙ্গামাটিতে ছোট-বড় অনেকগুলো হাউস বোট রয়েছে। তার মধ্যে এই হাউস বোটটি আয়তনে, সুযোগ-সুবিধায় এবং সৌন্দর্যে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে আছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের।
এটি বাংলাদেশের অন্যতম বিলাসবহুল প্রমোদতরী যা রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই লেকে পর্যটক নিয়ে ভ্রমণ করবে। প্রমোদতরীর মধ্যে রয়েছে ৮টি রুম, যার প্রতিটিতে আছে এটাচ ওয়াশরুম। এর মধ্যে দুটি রুম আছে সুপার প্রিমিয়াম যেগুলো ব্যালকনিসহ। প্রতিটি রুমেই ৪ জন করে লোক থাকতে পারবেন। দুতলায় একটা বড় রেস্টুরেন্ট আছে যেখানে বোটের গেস্টরা খাওয়া-দাওয়া করতে পারবে। বোটের মধ্যেই রান্না করার ব্যবস্থা থাকায় পর্যটকরা তাদের পছন্দমত সময়ে প্রকৃতি উপভোগ করে খাওয়া-দাওয়া করতে পারবেন।
বোটের মধ্যেই রিসোর্টের মত সুন্দর রুমের ব্যবস্থা থাকায় ভেতর থেকেই রাঙামাটির প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলো দেখতে পারবে। আর রাঙামাটির সকল পর্যটক স্পটগুলোতে কাপ্তাই লেকের তীরে হওয়ায় বোটে করেই সব স্পটে ঘুরতে পারবেন পর্যটকরা। রাত্রিযাপনের সুবিধা থাকায় কোনও পর্যটককে আলাদাভাবে রিসোর্ট নেওয়ার প্রয়োজন হবে না। এক বোটের মধ্যেই থাকা, খাওয়া এবং ঘোরার সকল সুযোগ-সুবিধা পাবেন পর্যটকরা। যারা দূর-দূরান্ত থেকে ফ্যামিলি বা গ্রুপ নিয়ে ঘুরতে যায় কাপ্তাই লেকের উদ্দেশে, তাদের জন্য এটা খুব ভালো একটা সার্ভিস হবে।
বোটটিতে রাঙামাটির বিশেষ পর্যটক প্লেসগুলো পর্যটকরা দুই দিন এক রাতের জন্য ঘুরতে পারবেন প্যাকেজে। প্যাকেজের মধ্যেই পর্যটকদের জন্য দুই দিনে ৬ বেলা খাবার, ৪ বেলা নাস্তা, সব স্পট ঘোরাসহ এক রাত প্রমোদতরীর মধ্যেই ভেসে ভেসে রাত্রিযাপন। প্যাকেজ খরচ প্রতিরুমে ৪ জন করে থাকলে একজনের লাগবে ৭ হাজার ৫০০ টাকা।
বোট প্যাকেজ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করুন ০১৭৯৫-৮০৩৭৩১ এই নম্বরে।
তথ্যঃ রাইজিং বিডি