প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ্যবইয়ে শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ হাসিনা এবং তাদের পরিবারের বন্দনা সংবলিত বিষয়বস্তু অপসারণ করার দাবি জানিয়েছে শিক্ষা অধিকার সংসদ নামে একটি সংগঠন।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিতে আয়োজিত এক গোল টেবিল বৈঠকে এ দাবি জানায় সংগঠনটি। সংগঠনটির সদস্য সচিব এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মো: শাহনেওয়াজ খান চন্দন লিখিত বক্তব্য আরও যেসব দাবি তুলে ধরেন—
• বিগত ১৫ বছরে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত বাংলা, ইংরেজি, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, ইতিহাস, পৌরনীতি প্রভৃতি বিষয়ের পাঠ্যপুস্তকে রাজনৈতিক প্রচার-প্রচারণামূলক বিষয়বস্তু ব্যাপকভাবে সংযোজিত হয়েছে। সকল পাঠ্যপুস্তক থেকে রাজনৈতিক প্রচারণামূলক ছবি, অনুচ্ছেদ, শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনা এবং তাদের পরিবারের ও তৎকালীন সরকারের বন্দনা সংবলিত পাঠ্য বিষয়বস্তু অপসারণ করতে হবে।
• বিগত স্বৈরাচার সরকারের পদলেহনকারী ও জুলাই অভ্যুত্থানের বিরোধিতাকারী লেখকদের রচনা পাঠ্যপুস্তক থেকে অপসারণ করতে হবে। এর পরিবর্তে বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত এবং সর্বজন শ্রদ্ধেয় সাহিত্যিকদের রচনা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
• সকল স্তরের পাঠ্যপুস্তকে প্রাসঙ্গিক ও শিক্ষার্থীদের বয়স উপযোগী করে জুলাই অভ্যুত্থান সম্পর্কিত পাঠ্য বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যেমন: জুলাই অভ্যুত্থানের ঘটনা প্রবাহ, শহীদদের জীবনী, আহত, নির্যাতিত, কারাবরণকারী শিক্ষার্থী, জনতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জীবনী অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
• পাঠ্যপুস্তকের প্রচ্ছদ, প্রারম্ভিক পৃষ্ঠাসমূহ ও ব্যাক কভারে রাজনৈতিক ছবি অপসারণ করে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রখ্যাত ছবি এবং গ্রাফিতি/দেয়ালচিত্র অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের (আবু সাঈদ ও অন্যান্যদের) জীবনী অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
• বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, ইতিহাস, পৌরনীতি, সামাজিক বিজ্ঞান প্রভৃতি গ্রন্থে জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাস, কোটা সংস্কার আন্দোলন, ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
• বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস বিদগ্ধ ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় ঐতিহাসিকদের দ্বারা পুনর্মূল্যায়ন করে নিরপেক্ষ ও সঠিক ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
• বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ও স্বাধীনতা অর্জনে যেসব মহান ব্যক্তিত্বের কথা পরিকল্পিতভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে তাদের জীবনী, তাদের অবদান অনুযায়ী গুরুত্ব প্রদান করে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। প্রতিটি বিষয়ের পাঠ্যপুস্তক পুনর্মূল্যায়ন ও পুনঃরচনার জন্য দক্ষ বিষয়বস্তু বিশেষজ্ঞ, শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি গঠন করতে হবে।
• কমিটির সুপারিশের আলোকে রচিত পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের আগে অংশীজনদের মতামতের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে।
• পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জনের জন্য প্রতিটি বিষয়ের জন্য স্থায়ী বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করতে হবে।
• ভবিষ্যতে বিগত স্বৈরাচার সরকারের আমলে প্রণীত জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০১২ এবং জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ থেকে বের হয়ে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে একটি যুগোপযোগী, আধুনিক শিক্ষানীতি ও শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করতে হবে এবং তার আলোকে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করতে হবে।
• প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ে রাজনৈতিক পাঠ্য বিষয়বস্তু সংযোজনের মাধ্যমে যে ইনডকট্রিনেশনের প্রথম ধাপ তৈরি করা হয়েছিল তা রোধ করা।
• জুলাই অভ্যুত্থান যে বাংলাদেশের জন্য একটি আত্মপরিচয় অনুসন্ধান ও স্বাধিকারের আন্দোলন, সে সম্পর্কে শিক্ষার্থীর মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা।
• প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাক্রমে জুলাই গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিষয়বস্তু সংযোজনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা।