কোথাও অনেক বড় গর্ত, আবার পাশেই ছোট গর্ত। বৃষ্টির পানি জমে আছে গর্তে-গর্তে। দেখে বোঝার উপায় নেই এখানে গর্ত আছে। সড়কে গাড়ির চাকার চাপে বেড়েই চলছে গর্তের প্রসশÍতা। কাঁদাপানি ছিঁটে নষ্ট হচ্ছে কাপড়-চোপড়। এ জনদুর্ভোগ চলাচল এলাকার হাজারো মানুষের।
এ সড়কটি টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার কয়ড়া-কেরামজানী সড়ক। পৌর সভার চালাষ চৌরাস্তা হতে ছোট বান্দ্রা পর্যন্ত। ২ কিলোমিটার সড়কে চলাচলে ‘সীমাহীন’ ভোগান্তি। সড়কটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বিভাগের অধীনে হলেও ওই ২ কিলোমিটার অংশ পড়েছে পৌর এলাকায়। কয়েক বছর পরপর এ জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটি নামমাত্র নি¤œমানের নির্মাণসামগ্রীতে সংস্কার করা হয়।
জনসাধরণ ও চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পৌর শহরের চালাষ চৌরাস্তা হয়ে সড়কটি চলে গেছে পার্শ্ববর্তী গোপালপুর উপজেলায়। ধনবাড়ী অংশের পৌরসভা ও কয়েক ইউনিয়নবাসী এ সড়ক দিয়ে উপজেলা সদরে চলাচল। ক্রমেই গর্ত বেড়ে যাওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সবাইকে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে নি¤œমানের নির্মাণসামগ্রী ইট, পাথর ও বিটুমিন দিয়ে এটি বারবারই সংস্কার করে উপজেলা স্থানীয় সরকার বিভাগের (এলজিইডি) ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ফলে বছর না ঘুরতেই সড়কে দেখা দেয় খানাখন্দ। সংস্কারের পর থেকেই অধিকাংশ স্থানে কার্পেটিং ওঠে যায়। বৃষ্টি হলেই নানা স্থানে ভাঙতে শুরু করে।
সরেজমিনে আজ বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা যায়, ধনবাড়ী চালাষ চৌরাস্তা হতে এ সড়কটির শুরু। কয়েক গজ যেতেই সড়কজুড়ে শুরু হয়েছে খানাখন্দ। পাঁকা কার্পেটিং উঠে বেরিয়ে পড়েছে ইটের খোঁয়া, বালু ও পাথর। গর্তে জমে আছে কাঁদাপানি। বৃষ্টিতে খানাখন্দগুলো রূপ নিয়েছে বড়-বড় গর্তে। গাড়ির চাকার চাপে ভাঙতে-ভাঙতে গর্তগুলো আরও প্রশস্ত হচ্ছে। গত তিন দিনের অবিরাম বর্ষণে সড়কে পানি জমে চলাচলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। কাঁদাপানি ছিঁটে কাপড়-চোপড় নষ্ট হচ্ছে যাত্রী, পথচারী ও শিক্ষার্থীদের।
আরও দেখা যায়, ওই সড়কের ছোট বান্দ্রা পর্যন্ত অন্তত ৩০/৩৫টি গর্ত। দূর থেকে দেখে মনে হয় না এগুলো গর্ত। ফলে ভারি যানসহ বিভিন্ন যানবাহনগুলো চলছে ঝুঁকি নিয়ে। গর্তে অটকে যাচ্ছে বিভিন্ন ধরণের মালবাহী গাড়ি। এতে করে আরও নষ্ট হচ্ছে সড়ক। মাঝে মধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা। রাতে চলাচলে জনদুর্ভোগ নেমে আসে এ সড়কে।
পথচারী হেলাল উদ্দিন ও রশিদ মিয়া বলেন, ‘এ সড়কে চলা এখন বড়ই দায়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সবাইকে চলতে হয়। অটোরিকশা-ভ্যানের চাকা গর্তে পড়লে গাড়ি উল্টে যায়। হেঁটে চলাচলে কাঁদাপানি ছিঁটে জামাকাপড় নষ্ট হয়ে যায়।’
মুশুদ্দি এলাকার সবজি চাষি ইয়াসিন আলী বলেন, ‘এই সড়কের ২ কিলোমিটার অংশ খুবই নাজুক। সময় মতো সবজি নিয়ে সদরে পৌঁছা যায় না। অনেক সময় লসের মুখে পড়তে হয়। সড়কটি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেয়া জরুরি বলে দাবি করেন এই সবজি চাষি।’
অটোরিকশা চালক আবুল মিয়া, কাদের হোসেন ও আব্দুর রহিম-এর ভাষ্য, ‘কিছু দিন আগে ঋণের আড়াই লাখ টাকায় অটোরিকশা কিনেছি। সড়কে খানাখন্দের কারণে গাড়ি লক্কর-ঝক্কর হয়ে গেছে। অল্প বৃষ্টিতে গর্তে পানি জমে। ফলে কোনটা ছোট আর কোনটা বড় গর্ত বুঝে ওঠা কঠিন। ৫ মিনিটের সড়ক ৩০ মিনিটেও যাওয়া যায় না।’
এদিকে, উপজেলার মুশুদ্দি, পাইস্কা ও বলিভদ্র ইউনিয়ন কৃষিপ্রধান। এর মধ্যে মুশুদ্দি এলাকায় ‘নিরাপদ সবজি’ উৎপাদন করে কৃষকরা। তাদের উৎপাদিত বিভিন্ন কৃষিপণ্য ভোর বেলায় উপজেলা সদরে নিয়ে আসতে হয়। সড়কের এ বেহাল দশায় ক্ষোভ বিরাজ করছে তাদের মধ্যে।
২ কিলোমিটার সড়কে বেহাল দশা সত্যতা স্বীকার করে পৌর মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বকল। তিনি বিডি নিউজ বুককে বলেন, ‘এই দুই কিলোমিটার সড়ক দ্রæত সংস্কারের বিষয়ে উপজেলা স্থানীয় সরকার বিভাগকে (এলজিইডি) অবহিত করা হয়েছে।’
সড়ক সংস্কারের বিষয়ে এলজিইডি উপজেলা প্রকৌশলী জয়নাল আবেদীনের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।