বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায়, হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলার আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের (মৃত্যুদণ্ডের জন্য হাইকোর্টের অনুমোদন) ওপর রোববার (১ ডিসেম্বর) রায় ঘোষণা করবেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে ওই দিনের কার্যতালিকায় মামলা দুটি ৫৪ ও ৫৫ নম্বর ক্রমিকে রাখা হয়েছে। এর আগে ২১ নভেম্বর শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রেখেছিলেন হাইকোর্ট। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জসিম সরকার। আসামি পক্ষে ছিলেন, আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও শিশির মনির।
এ বিষয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান জানান, মামলার দ্বিতীয় অভিযোগপত্রে যাদের আসামি করা হয়েছে, সেটি আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, দ্বিতীয় অভিযোগপত্র ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দেয়া হয়নি, সরাসরি জজ আদালতে দেয়া হয়। সে জন্য এই অভিযোগপত্র ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী গৃহীত হতে পারে না।
তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে কে গ্রেনেড ফাটালো, এটা নিয়ে কারো সাক্ষ্য নেই। বা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেই। এটার হদিস পাওয়া যায়নি। এ মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফর জামান বাবর খালাস পেতে পারেন বলে আশা আইনজীবীর। তারেক রহমানের বিষয়ে জানান, ‘আমি এটা উল্লেখ করেছি। যদিও তার কোনো আপিল নেই। কিন্তু আপনি (আদালত) যদি মনে করেন যে এ মামলার কোনো আসামির বিরুদ্ধে প্রমাণ হয় নাই, বা দায়সারা চার্জশিট দেয়া হয়েছে। মামলা প্রমাণ না হলে, খালাস পাওয়ার যোগ্য হলে আদালত খালাস দিতে পারেন। এটা ভারত,পাকিস্তান ও আমাদের সুপ্রিম কোর্টে নজির আছে।
অপর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনিরের মতে, মুফতি হান্নানের দ্বিতীয় জবানবন্দির ভিত্তিতে অধিকতর যে তদন্ত হয়েছে, সেটির আইনগত ভিত্তি নেই। সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাজা দেয়া হয়েছে। এ মামলায় আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নির্যাতনের মাধ্যমে আদায় করা হয়েছে। এ ঘটনার মামলায় ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর বিচারিক আদালত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দেন।
একই সঙ্গে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয় অপর ১১ আসামিকে। পরে ওই বছরের ২৭ নভেম্বর মামলার বিচারিক আদালতের রায় প্রয়োজনীয় নথিসহ হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় পৌঁছায়। পাশাপাশি কারাবন্দি আসামিরা আপিল করেন। গত ৩১ অক্টোবর আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের ওপর শুনানি শুরু হয়।
ঘটনা ও বিচার প্রক্রিয়া: ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা হয়। অল্পের জন্য ওই হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। তবে হামলায় আওয়ামী লীগের মহিল বিষয়ক সম্পাদক, সাবেক রাষ্ট্রপতি (প্রয়াত) জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন দলটির ৩ শতাধিক নেতাকর্মী। ঘটনার পরদিন মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়।
তদন্ত শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালের ১১ জুন দেয়া অভিযোগপত্রে বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন ও হুজি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পর অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।
দুই বছর তদন্তের পর ২০১১ সালের ৩ জুলাই ৩০ জনকে আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এর ফলে এ মামলায় মোট আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ৫২। মোট আসামির মধ্যে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও মুফতি হান্নান এবং তার সহযোগী শাহেদুল ইসলাম বিপুলের মৃত্যুদণ্ড অন্য মামলায় কার্যকর হয়। ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় এ মামলার বর্তমান আসামির সংখ্যা ৪৯ জন।