• শুক্রবার ১০ জানুয়ারী, ২০২৫
logo

যান্ত্রিকতার যুগে হাতে ভাজা মুড়ি তলানিতে, পেশা ছাড়ছে মুড়ি কারিগররা

নিজস্ব প্রতিবেদক ০১ এপ্রিল, ২০২৪ ১১:২৬ এএম

রোজায় ইফতার মাহফিলে, ঈদ এবং নবান্ন, পূজা-পার্বন সহ বিভিন্ন উৎসবে গ্রামাঞ্চলে মুড়ি-মুড়কির আলাদা একটি কদর থাকেই

মুড়ির চাহিদা সারাবছর থাকলেও রমজান মাসে এর উৎপাদন এবং বিক্রি অনেকাংশে বেড়ে যায়। মৌসুমী ব্যবসা হিসেবে এ মাসে মুড়ি তৈরি এবং বিক্রি করে থাকেন অনেকেই। স্বাদে মানে গুণে ভালো হওয়ার পরও গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী হাতে ভাজা মুড়ি এখন মেশিনে ভাজা মুড়িতে ঠাসা বাজারে টিকতে পাড়ছে না। পাল্লা দিয়ে টিকতে না পেরে নওগাঁর রাণীনগরে এ পেশা ছেড়েছেন অনেকেই। তাই হাতে তৈরি মুড়ির বাজার এখন তলানিতে।

রাণীনগর পুঠিয়া আজিজুল রহমান মেমোরিয়াল একাডেমি’র শিক্ষক মাসুদ রানা সময় ডট নিউজকে বলেন, রোজায় ইফতার মাহফিলে, ঈদ এবং নবান্ন, পূজা-পার্বন সহ বিভিন্ন উৎসবে গ্রামাঞ্চলে মুড়ি-মুড়কির আলাদা একটি কদর থাকেই। কিন্তু  বহু বছরের গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী হাতে ভাজা সুস্বাদু মুড়ির কদর এখন আর নেই। কারণ মেশিনে তৈরি মুড়ি এখন হাট-বাজার মুদি দোকানসহ সবখানে জায়গা করে নিয়েছে। মেশিনে তৈরি মুড়ি আকারে বড়, পরিস্কার সাদা, ওজনেও বেশি পাওয়া যায়। 

অপরদিকে হাতে ভাজা মুড়ি আকারে ছোট, হালকা লালচে, ওজনে একটু ভারী কিন্তু স্বাদে মানে গুণে ভালো।

 উপজেলার সিম্বা বাজারের মুড়ি ব্যবসায়ী ও মুদি দোকানদার  সেফাত, এমদাদুল সময় ডট নিউজকে জানান, মেশিনে তৈরি মুড়িতে ঠাসা বাজারে হাতে ভাজা মুড়ি ঢুকতে না পারলেও অনেক ব্যবসায়ী আছে যারা সাইকেল যোগে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বিক্রি করে আলাদা স্বাদযুক্ত হাতে ভাজা মুড়ি। গ্রামের মধ্যে ক্রেতাও পাওয়া যায় আশানুরুপ। গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় ঘুরলে মহিলা ক্রেতারাই এই মুড়ি বেশি কিনে। 

যান্ত্রিকতার সাথে পাল্লা দিয়ে বাজারে টিকতে না পেরে এ পেশা ছেড়েছেন অনেকেই। অল্প সংখ্যক কারিগর পূর্বপুরুষের পেশা আজও ধরে রেখেছে। তারা স্বল্প পরিমাণে হলেও মুড়ি ভেজে পাড়া-গাঁয়ে বিক্রি ও আত্মীয়-স্বজনসহ বিভিন্ন উৎসবে খাওয়ার জন্য রাখে বলে জানান মুড়ি ভাজার কারিগর উপজেলার বেলঘড়িয়া গ্রামের নিদয় সরকার ও অরবিন্দু।

একই গ্রামের রুইদাস ও নিদয় সরকার সময় ডট নিউজকে বলেন, একজন ব্যক্তি দিনে এক থেকে দেড় মণ চালের মুড়ি খুব কষ্ট করে ভাজে। প্রতি মণ চালে প্রায় ২২ থেকে ২৩ কেজি মুড়ি হয়। বর্তমানে প্রতি কেজি মুড়ি পাইকারি ৮০ টাকা এবং খুচরা প্রায় ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

অরবিন্দু সময় ডট নিউজকে বলেন, মুড়ি তৈরি করতে ধান সিদ্ধ করে রোদে শুকানোর পর আবার সেই ধান মেশিনে মাড়াই করে মুড়ি ভাজার জন্যে চাল তৈরি করে সেই চাল লবণ জলের মিশ্রণে আগুনের তাপ সহ্য করে বিশুদ্ধ মুড়ি ভাজতে অনেক পরিশ্রম হয়। 

মুড়ি ভাজার প্রতি মণ ধান ১ হাজার ৩ শত টাকা। এক মণ চালের মুড়ি ভাজতে খড়ি, লবণ, যাতায়াত ও ধান ভাঙানোর খরচ আরও ১৫০ টাকা। এক মণ চালের মুড়ি ভাজলে প্রায় ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা লাভ হয়। তাই অতিরিক্ত পরিশ্রম না করে এখন আমরা মেশিনে ভাজা মুড়ি পাইকারি কিনে বাজারে বিক্রি করছি।

Tags: