টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার মুশুদ্দি ইউনিয়নের (সান্দারবাড়ি) এলাকায় হযরত শাহছুফী মাওলানা নাঈমুদ্দিন চিশ্তী (রঃ) এর মাজারে শুরু হয়েছে ৮৮তম ওরশ।
এই ওরশকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে মজমায় চলছে মাদক সেবন ও রমরমা গাঁজার বাণিজ্য। এছাড়াও মাজারে চলছে ওয়াজ মাহফিল ও ধর্মীয় গান। এ ওরসে সাধু ও পুণ্যার্থীরা মাদক জোগান দিচ্ছে দেশের বিভিন্নস্থান থেকে। তাঁরা মনে করেন মাজারে এসে গাঁজা খাবেন না তা কি করে হয়? সব মিলিয়ে এ যেনো ওরসের নামে মাদকসেবীদের মহামিলন। গত রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত থেকে শুরু হওয়া ওরশ শেষ হবে বুধবার (০১ মার্চ)।
স্থানীয়রা জানান, নাঈমুদ্দিন চিশ্তী উপমহাদেশের একজন খ্যাতিমান আউলিয়ার দাবিদার ছিলেন। তিনি এই গ্রামে মৃত্যুবরণ করেন। সেখানেই তাকে কবর দিয়ে মাজার স্থাপন করে ভক্তরা। স্মৃতি ধরে রাখতে ওই সময় থেকেই শুরু হয় ওরশ। তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময়ই কাটিয়েছেন বিভিন্ন অঞ্চলে। তিন-চার দিনের এ ওরশে আসা প্রতিটি বিভিন্ন দোকান থেকে ১ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয় মাজার কমিটি।
মাজারে দেয়া হচ্ছে গরু, ছাগল, নগদ অর্থ, আগরবাতি ও মোমবাতি। প্রতিদিন উঠছে লক্ষাধিক টাকা। সব মিলিয়ে এখানে বাণিজ্য হচ্ছে কোটি টাকা। এ টাকার কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না সরকার। অনেকেই আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছেন। টাকা ভাগাভাগি নিয়ে ঘটে নানা অপ্রতীকর ঘটনা। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ওরশকে কেন্দ্র করে এখানে চলছে মাদক বিক্রি, সেবন ও অশ্লীলতা।
সোমবার (২৭ ফেব্রæয়ারি) রাতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ওরশে মাদকসেবীরা মাজারের এলাকার নদীর পশ্চিম পাশে শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী মাদক বিক্রি ও সেবনের আস্তানা বসিয়েছে। প্রায় সকল প্রকার মাদকই (গাজাঁ, ইয়াবা, হিরোইন) পাওয়া যাচ্ছে ওরশে ।
প্রতিদিন সকাল থেকে জমতে থাকে মাদকের দোকান, চলে সারারাত। ওরশ প্রাঙ্গণ যেন নেশার স্বর্গরাজ্য। প্রশাসনিক কোনো তৎপরতা নেই। দলে-দলে আস্তানায় চলছে মাদক সেবন, বেশির ভাগই যুবক সমাজ। মাদক সেবন শেষে আবার অনেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ওরশে প্রাঙ্গণের বাতাসে বইছে মাদকের গন্ধ।
গাঁজা খেতে আসা লোকমান হোসেন বলেন, ‘ওরশে এসে গাঁজা না খেলে নিজেকে শুদ্ধ করা যায় না, তাই খাচ্ছি। অপর মাসকসেবী করিব হোসেন বলেন, জামালপুর থেকে এসেছি, প্রতি বছর বাবার মাজারে আসি। গাঁজা আর বাবাকে ছাড়া কিছুই মনে রাখতে পারি না।’
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মজিদ বলেন, ‘যেভাবে এ ওরশে গাঁজার ব্যবসা ও সেবন চলছে অথচ প্রশাসনের দৃষ্টি নেই।’
মুশুদ্দি ইউপি চেয়ারম্যান আবু কাউসার বলেন, ‘আমি ঢাকায় রয়েছি। এ বিষয়ে কিছু জানি না। তবে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
প্রকাশ্যে এভাবে মাদক বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে ধনবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এইচএম জসিম উদ্দিন বলেন, ‘ওরশে অনেক লোকের সমাগম হয়। তবে যতদূর জানি তাঁরা পার্শ্ববর্তী উপজেলায় সরিষাবাড়ীতে আসর বসিয়েছে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’