দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, কঠোর সময়সীমা এবং সীমিত কাজের স্বাধীনতা ব্রিটেনের কর্মীদের মধ্যে ভয়াবহ মানসিক চাপ তৈরি করছে। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে তাই কর্মক্ষেত্রের র্যাংকিংয়ে যুক্তরাজ্য সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে আছে। একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এতো কঠোর নীতির পরও যুক্তরাজ্যে কর্মক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতায় তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।
প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে “কমিশন ফর হেলদিয়ার ওয়ার্কিং লাইভস” এর জন্য, যা ব্রিটেনের হেলথ ফাউন্ডেশন থিংক ট্যাংক কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত একটি সংস্থা। এতে ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিনিধিত্বও রয়েছে, যা নতুন কর্মসংস্থান আইনের আওতায় কাজের পরিবেশ উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় যুক্তরাজ্যের কর্মীরা বেশি চাপের মুখোমুখি। তিন-পঞ্চমাংশ কর্মী কঠোর সময়সীমায় কাজ করেন এবং দুই-পঞ্চমাংশ দ্রুতগতিতে কাজ করতে বাধ্য হন। তবে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ কর্মী তাদের কাজের গতি নির্ধারণ করার স্বাধীনতা পান।
প্রতিবেদনের এক লেখক ও ইনস্টিটিউট ফর এমপ্লয়মেন্ট স্টাডিজের প্রধান গবেষণা ফেলো জনি গিফোর্ড বলেন, “বর্তমানে যেসব সমস্যাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধান করা প্রয়োজন, সেগুলো হলো দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, কাজের তীব্র চাপ এবং কাজের স্বাধীনতার অভাব।”
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, নির্মাণ, পরিবহন, গুদামজাতকরণ, খুচরা এবং সেবাখাতে কাজের পরিবেশ সবচেয়ে খারাপ। নার্স এবং শিক্ষকদের অনেক চাপের মধ্যে কাজ করতে হয়। এছাড়া প্রতিবেদনটি আরও জানিয়েছে, গত ২৫ বছরে কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নতুন শ্রম আইন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কনফেডারেশন অব ব্রিটিশ ইন্ডাস্ট্রি সতর্ক করে বলেছে, কঠোর নিয়ম-নীতি, সামাজিক নিরাপত্তা কর বৃদ্ধি এবং সর্বনিম্ন মজুরি বৃদ্ধির ফলে কর্মীর সংখ্যা হ্রাস পেতে পারে এবং অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ কমে যেতে পারে।
২০২১ সালের ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মক্ষেত্র সংক্রান্ত সমীক্ষার ভিত্তিতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় সব সূচকে যুক্তরাজ্যের কর্মীরা ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছেন। প্রায় অর্ধেক কর্মী বলেছেন, তারা কাজের কারণে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।
নতুন লেবার সরকার কর্মক্ষেত্রের মানোন্নয়নে কঠোর নিয়ম চালুর পরিকল্পনা করছে। তবে এর ফলাফল কী হবে, তা নিয়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।